Top News

হাসিনা-কাদের-বেনজীরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন ইন্টারপোলে

 


জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় সাবেক ১২ নেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে তিনটি ধাপে এই আবেদন পাঠিয়েছে পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB)।

রেড নোটিশের আওতায় যাদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য ১০ জন নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা রেড নোটিশ আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধ–এর অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক আবেদন করা হয়েছে

এছাড়া, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা তিনটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা

* ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে হত্যার অভিযোগ

* বিগত ১৫ বছরে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে দায়ের করা আরেকটি মামলা

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে, প্রথম মামলার তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামীকাল রোববার এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।

ভারত থেকে ফেরত আনার চেষ্ট

জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায়, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও আইনি ও কূটনৈতিক জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া সহজ হবে না। তবুও সরকার চুক্তির আওতায় ওইসব পলাতক নেতাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার একটি আদালত ইতিমধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করতে সময় নিতে পারে, তবে আর্থিক অপরাধের ক্ষেত্রে তৎপরতা বেশি দেখা যায়। সে কারণে বেনজীরের বিষয়ে দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি হবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ের আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত ও অভিযানের ঘটনা। পরিস্থিতি ঘিরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নজরদারি বেড়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার মামলাগুলোর বিচার ও তাঁইন্টারপোলের সদস্যভুক্ত দেশ এখন ১৯৬টি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য যাচাই-বাছাই এবং আদান-প্রদানে ১৯৬টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবির নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কোনো অপরাধী দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে অবস্থান করলে তাঁকে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট দেশ তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ ১২ সাবেক কর্মকর্তা ও নেতার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে আবেদন পাঠানো হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে এ পর্যন্ত তাঁদের কারও নাম দেখা যায়নি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বর্তমানে মোট ৬,৫৮৩ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি রয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন বাংলাদেশি। তবে নতুন করে যাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ চাওয়া হয়েছে, তাঁদের নাম সেই তালিকায় নেই।

কেন দেরি হচ্ছে?

সরকার ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অভিযোগ থাকায় ইন্টারপোল সাধারণত এ ধরনের মামলায় রেড নোটিশ জারি করতে বেশি যাচাই-বাছাই করে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে—এমনটাই বলছে পুলিশ সূত্র।

তবে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আনা আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অ-রাজনৈতিক হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রে ইন্টারপোল দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ চাওয়া হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুরেড নোটিশ মানেই গ্রেপ্তার নয়

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) ইনামুল হক জানিয়েছেন, রেড নোটিশ কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়, তবে এটি অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। রেড নোটিশ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইমিগ্রেশন বা বিমানবন্দরে আটক হতে পারেন, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার হয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।য়ারিতে।র প্রত্যর্পণ ইস্যুতে।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post