অন্তর্বর্তী সরকার: সংস্কারের লক্ষ্যে পদত্যাগ আর পরিবর্তনের হিড়িক

 


প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদলে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে; নাটকীয়তার আরেক দিনে আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে সরে যেতে হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে, পদ ছেড়েছেন উপাচার্যসহ আরও অনেকে।

সদ্য দায়িত্ব নেওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের যে জনদাবি উঠেছে, দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মাথায় সেটি এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও এসেছে উপদেষ্টাদের কাছ থেকে।

একই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালায়ে নাটকীয় এক দিনে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান; সরে যেতে হয়েছে আরও পাঁচ বিচারপতিকে। এদিন সরকারের বিভিন্ন দফতরে পদত্যাগ আর পরিবর্তনের হিড়িক পড়েছে।শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটামের মধ্য তাদের চাওয়া অনুযায়ী দিন শেষে নতুন বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই বিচারপতি দেশের পঞ্চবিংশতিতম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন; যিনি ওবায়দুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হবেন।শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রোববার তার শপথ পড়াবেন বলে খবরে এসেছে।

আগের দিন গভর্নর এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের ধারা অব্যাহত ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও।এমন পালাবদলের মধ্যে পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কারের সুফল দেশের মানুষ পাবে।

কোটা সংস্কারকে ঘিরে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা রংপুরে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে ইউনূস বলেন, “আবু সাঈদ চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তার গুলি খাওয়ার যে ছবি মানুষ দেখলো, এরপর মানুষকে আর থামানো যায়নি। তোমরা দ্বিতীয় বিজয় এনে দিয়েছো। দেশের মানুষ এ বিজয়ের সুফল ভোগ করবে।”

শনিবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন তিনি।

ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তার সামনে আছে বন্ধুর পথ। প্রত্যাশার চাপ আর কঠিন বাস্তবতার মধ্যে মেলবন্ধন কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নও আছে।তবে বিজয়ের সুফল পেতে কতদিন দায়িত্বে থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট না করলেও এদিন সচিবালয়ে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, “আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাকে সুখকর না। আমি বলতে চাই, সব প্রতিষ্ঠানই সংস্কার করা হবে।”

“সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই আমরা থাকব। বেশিও না কমও না।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “আপনাদের দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন। আবার এদেশের সাধারণ মানুষের যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেখান থেকে প্রত্যাশা থাকবে এই সরকার যেন জরুরি কিছু সংস্কার করে যায়।”নির্বাচন কমিশনেও সংস্কারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তো আপনারা জানেন। এখানে যদি ‘থরো ওভারহলিং’ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা তো আবার এই প্রতিষ্ঠানকে সেইভাবে ব্যবহার করবে।”

সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা যে দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

শনিবার মতিঝিলের শিল্পভবনে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “জনগণের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, এত মানুষের রক্তের উপর দিয়ে আমরা দায়িত্ব এসেছি। এখানে দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই। অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে আমরা ছাত্র-জনতার ম্যান্ডেট পূরণে সাধ্যমত চেষ্টা করব।”ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার তৃতীয় দিনে যেসব পদে পদত্যাগ বা পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ।

বিচারালয়ের শীর্ষ পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি প্রবল হওয়ার পর শনিবার পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

এক সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার বিচার অঙ্গনের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post