লোমহর্ষক ঘটনা শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক



 চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি। কথায় কথায় গুলি ছোড়ার কারণে আলোচিত তিনি। কোনো ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তার নজরে পড়লে আর রেহাই মিলত না। যেকোনোভাবে চাপ প্রয়োগ করে আদায় করতেন মোটা অঙ্কের চাঁদা। নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও খুলশী এবং জেলার হাটহাজারী-রাউজান উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা তার চাঁদাবাজিতে ছিলেন অতিষ্ঠ। এসব এলাকায় নতুন কোনো বড় ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করলেই সাজ্জাদকে দিতে হতো নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা।গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের এক নেতার প্রশ্রয়ে হয়ে ওঠেন অপরাধ জগতের মূর্তিমান আতঙ্ক। এসময়ের মধ্যে তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটান সাজ্জাদ। তাকে ধরতে কোনো কৌশলই কাজ দিচ্ছিল না চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)।

গত ৫ ডিসেম্বর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। তখন উল্টো পুলিশকে গুলি করে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। নাকানিচুবানি খাওয়ানো এ সন্ত্রাসীকে নানারকম ফাঁদ পেতে শনিবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির একটি টিম।তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। অন্তত চার মাস ধরে তাকে গ্রেপ্তারে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কৌশলই কাজে আসছিল না। আবার মোবাইলে কোনো সিম সংযোগ না থাকায় তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তবে গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে সাজ্জাদের স্ত্রীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে একটি কার দেখা যায়।

এ সূত্র ধরে এগোতে থাকে পুলিশ। প্রথমে বিআরটিএ থেকে ওই গাড়ির মালিককে শনাক্ত করা হয়। গাড়ির মালিকের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চালক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নাকে নিয়ে তিনি অক্সিজেন মোড়ের একটি বাসা থেকে রাউজানের কদলপুর এলাকায় গিয়েছিলেন। চালকের দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে অক্সিজেন মোড়ের ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়। সেখানে সাজ্জাদের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে ৫ ডিসেম্বর বাসাটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু ওইদিন উল্টো পুলিশকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। সেদিন তার ছোড়া গুলিতে কয়েকজন আহত হন।ঘটনার দিন এক অভিযানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রথমে সাজ্জাদ পুলিশের সোর্সকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে তিনি আহত হলে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফাঁকে সাজ্জাদ ছয় তলা ভবনের ছাদে উঠে যান। ছাদের দরজায় তালাটি ভেঙে ফেলেন গুলি করে। এরপর পার্শ্ববর্তী একটি পাঁচ তলা ভবনে লাফ দিয়ে চলে যান। সেখান থেকে আরেকটি ভবনে লাফ দেন। ওই ভবনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে কেয়ারটেকারকে গুলি করে পালিয়ে যান সাজ্জাদ।


সিএমপির ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই ঘটনার পর সাজ্জাদ একেবারে গা-ঢাকা দেন। সিমযুক্ত মোবাইল ব্যবহার না করে শুধু যোগাযোগের জন্য বিশেষায়িত অ্যাপস ব্যবহার করতেন তিনি। এটি দিয়ে স্ত্রী ও সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তবে সাজ্জাদকে ধরতে স্ত্রীর ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখে পুলিশ। স্ত্রীর গতিবিধির মাধ্যমে সাজ্জাদের ঢাকায় বাসা নেওয়ার তথ্য পায় পুলিশ।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সপ্তাহখানেক আগে থেকে পুলিশের সোর্স ঢাকায় অবস্থান নেন। সবশেষ তামান্না তার এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে যান। সঙ্গে ছিলেন সাজ্জাদও। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেয় সিএমপির টিম। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সে সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর গতিবিধির ওপর নজরদারি করা হয়। একপর্যায়ে সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশ। প্রথমে তাকে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে পুলিশ স্কটের মাধ্যমে চট্টগ্রামে আনা হয়।

রোববার (১৬ মার্চ) তাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বলেন, গত আগস্টে অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন এবং পরে চান্দগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সাজ্জাদ। পাশাপাশি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী কার্যক্রম করত। দুবাই প্রবাসী বড় সাজ্জাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করত

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post