ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও করে প্রচার করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি কার্যালয়ে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে অনেকে ‘দুষ্টুমি’ করে বলতেন ‘হারুনের ভাতের হোটেল’। এমন নামকরণের বিষয়টি অবশ্য উপভোগ করতেন তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে হারুন নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক। এখন ডিবিপ্রধানের দায়িত্বে আছেন রেজাউল করিম মল্লিক। তিনিসহ ডিবির কর্মকর্তারা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে ‘ভাতের হোটেল’ আর ফিরবে না। হারুন এবং তাঁর ভাতের হোটেলের কারণে ডিবির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। মানুষ এটি নিয়ে হাসি-তামাশা করেছে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে হারুন হাস্যরসে পরিণত করেছিলেন। হারুন যে কক্ষটিকে ভাতের হোটেল বানিয়েছিলেন, সেই কক্ষ এখন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।হারুন অর রশীদ ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২২ সালের জুলাই মাসে। পরের বছর ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুরান ঢাকা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তখন আপ্যায়ন করেন হারুন। নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দেন এবং সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন। মূলত এরপরই ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নাম চালু হয়।গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ভিডিও প্রচারের পর ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই কক্ষে আপ্যায়ন করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকেন হারুন অর রশীদ। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং গান বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আসার পর তাঁদের ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর বাইরে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসা তারকা, টিকটকার ও ব্লগারদের খাইয়ে সেটির ভিডিও করে প্রচার করতে থাকেন হারুন অর রশীদ। এভাবে ডিবি কার্যালয় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামে আরও পরিচিত পায়।
তখন হারুন অর রশীদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘কেউ হয়তো মনে করতে পারে, ডিবি একটা ভাতের হোটেল, বলতে পারেন। এতে আমাদের ডিবি ডিমোরালাইজড (মনোবল হারানো) হবে না। এটা আমাদের একটি মানবিক সাইড (দিক)।’
Post a Comment