মাগুরার বহুল আলোচিত তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আসিয়া ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ৮ দিন পর দুপুরে ঢাকা সিএমএইচে মারা গেছে। এ ঘটনায় জেলার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে নিহতের বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের বিবৃতিতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
দীর্ঘ আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। দুপুরের পরে আসিয়ার লাশ ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় হেলিকপ্টার যোগে মাগুরা স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তার লাশ মাগুরা নোমানী ময়দানে এনে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়ন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বর্তমান নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ অন্যরা। জানাযায় ইমামতি করেন খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মওলানা মামুনুল হক। পরে তার লাশ নিজগ্রাম শ্রীপুর উপজেলার জারিয়াতে নিয়ে আসা হয়। রাত নয়টার দিকে আসিয়ার লাশ পার্শ্ববর্তী সোনাইকুন্ডি ঈদগাহসংলগ্ন গোরস্থানে আসিয়া কে দাফন করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের খুলনা বিভাগীয় ডিআইজি মোহাম্মদ রফিকুল হক, মাগুরার জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম, পুলিশ পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদাসহ কর্মকর্তা বৃন্দ।
নিহতের পিতা মানসিক প্রতিবন্ধী ফেরদৌস শেখ বাকরুদ্ধ থাকলেও তার খালা রোকসানা বেগম, ফুপু মমতা বেগমসহ এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত উৎসুক জনতা নিহত আছিয়ার বাড়িতে ভিড় করে। এ সময় তারা আসিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার দাবি করেন। নিহত আছিয়ার লাশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় আনা হয়। তারাবি নামাজের পর সোনাইকুন্ডি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নামাজে জানাযা শেষে সোনাইকুন্ডি গোরস্থানে দাফন করা হয়।
গত ৬ মার্চ ভোরে মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুলাভাই সজীব শেখ, তার বড় ভাই রাতুল শেখ ও তাদের পিতা হিটু শেখের পাশবিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হয় শিশু আছিয়া। এ ঘটনায় ৬ মার্চ ধর্ষণে অভিযুক্ত হিট্টু শেখ কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৭ মার্চ আর দুই ছেলে সজীব ও রাতুল কে গ্রেফতার করা হয়। ৮ মার্চ বিক্ষুব্ধ জনতার দাবির মুখে হিটু শেখের স্ত্রী জায়েদা খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন দুপুরে গ্রেফতারকৃত চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহত আসিয়ার মা আয়েশা আক্তার।
এদিকে নেককারজনক এই ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর থেকে মাগুরা সহ সারাদেশে ধর্ষণবিরোধী ব্যাপক জনমত তৈরি হয়। অধিকাংশ জেলা উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ বিরোধী মানববন্ধন মিছিল মিটিংয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আসিয়া ’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস ফর আসিয়া’ ইত্যাদি স্লোগানে স্লোগানে ঘৃণিত এ ধর্ষকদের ও তাদের সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিচার শেষ করে ফাঁসির দাবি ওঠে সারাদেশে। দাবীর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার একটি আদেশ দেয়া হয়। ওই আদেশের বিপরীতে আরো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার দাবি ওঠে সারাদেশে। এ অবস্থায় সরকার ৯০ দিন বা আরো কম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
Post a Comment